কাঁচা মরিচ দিয়ে আপ্যায়ন করলে মাইন্ড করবেন!
আমি যদি আপনাকে কাঁচা মরিচ খেতে আপ্যায়ন করি, মাইন্ড করবেন!!!
এক পোয়া কাঁচা মরিচে এখন দুই কেজি চাল পাওয়া যায়!!!
আপনি আমার বাড়ি বেড়াতে এলে বলাবাহুল্য, মাছ-মাংসই হবে আপনাকে আপ্যায়নেরে আমার পছন্দের শীর্ষ খাদ্য উপাদান। আপনিও খেয়ে গিয়ে গল্প করে বলবেন, “যাওয়ার পর খুব খাতির করেছে, মাছ-মাংস ছাড়া খেতেই দেয়নি”! যেহেতু এই খাবারগুলি দিয়ে অতিথিকে সম্মান করা হয় তাই, সম্মানজনক এই খাবারগুলির দাম বাজারে অন্য খাদ্য উপাদানের চেয়ে একটু যে বেশি তা বলাবাহুল্য।
বাজারে আরও অনেক সম্মানজনক, পুষ্টিকর, সুস্বাদু খাদ্যউপাদান আছে, যেমন; দই, মিষ্টি, আঙুর, আপেল, বেদানা, যা খেতে দিলে কেউ অসম্মানিত হন না বরং খুশি হন। কিন্তু এগুলো অপরিহার্য খাদ্য উপাদান নয়। এগুলো ছাড়াও অতিথিকে আপ্যায়ন করা যায়।
অন্তত গরীব মানুষেরা এগুলো ছাড়াই বেঁচে থাকেন। আর যে যত গলাবাজি করে বলুক না কেন, আমি জানি এদেশে, এমনকি খোদ এই রাজধানীতেও প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ বস্তির মতো ঘরে বাস করে টাকার অভাবে। তাদের কাছে মাছ-মাংস এখন অনেকটাই আকাশের চাঁদ- দামের কারণে।
সেই গরীবেরা নিজেরা যা খান, আপনজন এবং অতিথিকেও তাই খাওয়ান। সেই তালিকায় মাছ, মাংস, দই, মিষ্টির চেয়ে বেশি থাকে সাদা ভাত, লবণ, মরিচ আর পেঁয়াজ। যা খাবারের অপরিহার্য উপাদান।
কিন্তু এখন জানি না, কোন চক্রান্তে গরীব মানুষের অবলম্বন, কোন রকমে বেঁচে থাকার উপকরণ, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, সাদা ভাতের দাম ক্রমে আকাশছোঁয়া হয়ে যাচ্ছে, হয়ে গেছে! আজ সকালে বাজারে গিয়ে দেখি, কাঁচা মরিচের দাম কেজি প্রতি ৩২০ টাকা!!! ভেবে দেখলাম, এক পোয়া কাঁচা মরিচে প্রায় ২ কেজি চাল পাওয়া যায়!
কেন? এগুলোর ওপর বেঁচে থাকা মানুষগুলোকে পাগল করে তোলার জন্য! তাদের হিংস্র করে তোলার জন্য? কারণ, বেঁচে থাকার জন্য এ উপাদানগুলো তাদের প্রতিদিন, প্রতিক্ষণে দরকার-এটা বোঝে না আমাদের এসব ব্যাপার নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিরা? এভাবে চলতে থাকলে ওইসব দরিদ্র মানুষ বাধ্য হয়ে লুটপাট করুক, খারাপ কাজে মেতে উঠুক এটা চান কি তারা? পরিস্থিতি কিন্তু সেদিকেই যাচ্ছে! এটা আমার মতো একটা সাধারণ নাগরিক বোঝে, ”উর্দ্ধস্তন(!) কর্তাব্যক্তিরা” কেন বোঝেন না!
তেল-গ্যাস বাদই দিলাম। এখন এগুলো অনেকটাই সৌখিন মানুষের ব্যবহার্য উপাদান। এমনকি সেগুলো সরাসরি খাদ্য উপাদানও নয়। কিন্তু কাঁচা মরিচ নিশ্চয় কোন সৌখিন খাদ্য উপাদান নয়; মাছ-মাংসও নয়। যে যত অজুহাত দিক না কেন- সাধারণ মানুষের পাঁচটি মৌলিক উপাদানের নিশ্চয়তার শপথ করা রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গ এত সামান্য আকারের পাগলা ঘোড়ায় লাগাম পরাতে পারেন না এটা আমি মানতে রাজি নই মোটেও!
লেখক
আব্দুল্লাহ নুহু
সাংবাদিক
ই মেইল[email protected]
এই লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজের। এখানে প্রতিক্ষণ ডট কমের কোন নিজস্ব বক্তব্য নেই